নির্জন বিশ্বাস, খোকসা প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার খোকসাতে অবস্থিত গড়াই নদীর বিভিন্ন শাখা-উপশাখা ও খাল-বিলে পানির সংকটের প্রধান কারণ গড়াই ও হাওর নদীর মিলনস্থলে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত স্লুইচ গেট। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হয় এবং এর ফলে উত্তাল হাওর ধীরে ধীরে পলি জমে ভরাট হয়ে মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। যে নদীতে একসময় লঞ্চ চলাচল করতো সেখানে আজ ধু-ধু মরুভূমি। পুরাতন স্লুইচ গেটটিও বহু বছর যাবৎ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া হাওরের তুলনায় গড়াই নদীর পানির স্তর অনেক নিচে।
জানা গেছে, খোকসার জানিপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা চাষাবাদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই হাওরের ওপর নির্ভরশীল ছিলো। কারণ এখান থেকেই বিভিন্ন খাল-বিলে পৌঁছে যেত পানি। সেই হাওর নদী কালের বিবর্তনে আজ মরুভূমিতে পরিণত হওয়ায় কৃষকদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। একটু পানির জন্য তাদের হাহাকার চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। বিশেষ করে চলতি বছরে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে পাট চাষীরা চাতক পাখির মতো দিনের পর দিন আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনতিবিলম্বে হাওর নদী খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা না হলে এবং স্লুইচ গেটটি সংস্কার করা না হলে কৃষকদের পানির সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
এই বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা খোকসার কৃতি সন্তান অতিঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের (ভিক্টর) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি কৃষকদের পানির সংকট নিরসনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিমাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হান্নান এবং স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলামের সাথে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওর নদী গড়াইয়ের মুখ থেকে দশকাহনিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার খনন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হাওর নদীতে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গড়াই ও হাওর নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত স্লুইচ গেটটি সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চলতি বছরের শীত মৌসুমে নদী খননের কাজ শুরু হবে। এতে করে কৃষকদের পানির সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুকনো মৌসুমে ছোট নদী খাল খননের আওতায় হাওর নদী খনন করার বিষয় নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ইয়ামিন হক।
বারবার খোকসার জনমানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অতিঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা । একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হান্নান ও কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি গুরুত্বের সহকারে বিবেচনা করার জন্য। সেই সাথে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীদের যারা এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।